ছাদ বাগানের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

মোহাম্মদ ইকবাল কবির: বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। সুজলা—সুফলা, শস্য—শ্যামলা সবুজ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা আমাদের বাংলাদেশ। কিন্তু এই দেশে জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নগরায়ণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, হ্রাস পাচ্ছে গাছপালা, আরো কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। মোটকথা কৃষি জমির উপর বর্তমানে অনেক চাপ পড়ছে। আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন ব্যাপকভাবে নির্মাণের ফলে গাছপালা কমে যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে পরিবেশের উপর। যেখানে একটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ২৫% বনভূমি প্রয়োজন তাতে ভাটা পড়ছে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে। অনেকেই কৃষি জমিতে তৈরি করছে বড় বড় দালান কোঠা, মার্কেট, অফিস ও বাড়ী। বর্তমানে বহুতল ভবন বা বড় বড় ইমারত দ্বারা বিশাল বিশাল কৃষি অঞ্চল ক্রমান্বয়ে গড়ে উঠছে শহরে যাহা আমাদের পরিবেশের জন্য মোটেই সুখকর নয়। ফলে শহরাঞ্চলে আবাদি জমি ও গাছপালা কমে যাওয়ায় বনায়ন ও বৃক্ষরোপনের সুযোগ তেমন নেই। তাই আমাদের নগরকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে। ইট—কাঠের নাগরিক সভ্যতার শহরগুলো থেকে দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের একটা অংশ সবুজকে ধরে রাখতে চায় আবাস্থলে। আর তাই মানুষ তাদের ঘর বাড়িতে ছাদে এবং বারান্দায় সবুজকে ধরে রাখার জন্য একান্ত নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টায় বাড়ির ছাদে তৈরি করছে ছাদ বাগান। এই ছাদ বাগান ইতিপূর্বে সৌখিন লোকজনই করত। কিন্তু বর্তমানে মানুষ বুঝতে পেরেছে ছাদ বাগান শুধু লাভজনকই নয় বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি শহরের সব ছাদে পরিকল্পিতভাবে বাগান করা হয় তাহলে তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত কমানো সম্ভব।

ঢাকা শহরের দিকে যদি চিন্তা করি তাহলে দেখা যায় ৬০ শতাংশ জায়গায় কংক্রিটের কাঠামো আছে। এই বিশাল শহরে কৃষি জমির অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের এই শহরের পাশাপাশি গ্রামেও যে প্রচুর বিল্ডিং গড়ে উঠছে সেই বিল্ডিং এর ছাদগুলিকে কাজে লাগাতে হবে ছাদ বাগান করে। ছাদ বাগানের প্রতি আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। এই বাগান করতে গেলে ছাদ বাগান করার মত উপযোগী ছাদ তৈরি করতে হবে। তা না হলে ঐ ছাদে অর্থনৈতিক উন্নয়নত দূরের কথা বরং বিল্ডিং নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিবে। ছাদ বাগান করার উপযোগী করে বিল্ডিং নির্মাণ করলেই কেবল ছাদ বাগান করা উচিত। বিল্ডিং এ যদি আমরা ছাদকে পূর্ণ ব্যবহার করে ছাদ বাগান করতে পারি তাহলে তা বিল্ডিং এর লোকজনের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত সবজি, ফলমূল অল্প পরিমানে বিক্রি করা সম্ভব।

উদাহরণ স্বরূপ নাছরিন আক্তার ঢাকার ১৩২/৩ পূর্ব রাজা বাজারের একজন বাসিন্দা। তিনি তার ছাদে বাগান করে প্রতি বছর ছফেদা, আম, ডালিম, পেয়ারা, বর্তমানে ড্রাগন ফল এবং বিভিন্ন ধরনের শাক—সবজি উৎপাদন করে নিজে খাচ্ছেন এবং অতিরিক্ত হলে তা অন্যকে খাওয়ার জন্য দেন। এইগুলি চাষ করতে করতে তার অনেক অভিজ্ঞতা হয়। তিনি নিজেই জৈব সার তৈরি করেন, ফলে বেশিরভাগ ময়লা এখন তার সার তৈরিতে কাজে লাগছে। তিনি বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের কলম করতে পারেন এই ক্ষেত্রে তার সফলতা ৯৫%। এ বিষয়গুলির জন্য কোন কৃষি প্রশিক্ষণ বা কোন কৃষি কলেজ বা বিশ^^বিদ্যালয়ে পড়ার প্রয়োজন হয়নি। মেধা আর ইউটিউব দেখে তিনি শিখে গেছেন। এই উৎপাদন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে খুবই গুরুত্ব রাখছে। সবাই যদি এই উদ্যোগ নেয় তাহলে কাঁচা বাজারের উপর যে একটা বড় ধরনের চাপ যায় তা কিছুটা হলেও লাঘব করা যাবে। ছাদে যদি বাগান করে তবে অনেক কিছুই কিনতে হয় না। বর্তমানে ছাদ বাগান অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারও বর্তমানে ছাদ বাগানকে উৎসাহিত করছে। ছাদ বাগানের ফলে অক্সিজেন নির্গমনের মাধ্যমে নির্মল পরিবেশে নিশ্চিত হবে।

ছাগ বাগানে টব, ড্রাম ইত্যাদিতে মাটির বিকল্প হিসাবে কাঠের গুড়ো, কোকোবিট, গোবর সার মিশিয়ে সহজেই টমেটো, শিম, পালং শাক, বেগুন, মরিচ, ঢেঁড়স, পুঁইশাক ইত্যাদি চাষ করা যায়। ফলের মধ্যে ড্রাগন ফল, আম, পেয়ারা, আমড়া, লেবু, কুল, ছফেদা, স্ট্রবেরি, ডালিম ইত্যাদি চাষ করা যায়। তাছাড়া ফুলগাছ এবং ঔষধি গাছও চাষ করা যায়। এছাড়াও বন গাছগুলিকে বনসাই করে রাখা যায়। এই বনসাই অনেক মূল্যবান এমনও বনসাই আছে যার মূল্য ৫ লক্ষ টাকা। যেমন— বহু বছর আগের বটগাছ টবের মধ্যে বনসাই করা আছে তার শিল্পের গুণ সুন্দর্যের উপর এবং তার বয়সের উপর বনসাইয়ে দাম নির্ধারণ হয়।

তবে ছাদে বাগান করতে গেলে রৌদ্র বেশি থাকে বলে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। আবার বর্ষার সময় বৃষ্টির পানির কারণে গাছের গোড়া পঁচে যেতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তা নাহলে গাছ মরে যেতে পারে। আমরা যদি বাড়ীর মালিক এবং ভাড়াটিয়া সবাই মিলে বাড়ীর ছাদে এবং বারান্দায় বাগান করি তাহলে আমাদের ক্রংকিটের শহরে পরিবেশ যেমন রক্ষা পাবে তেমনি হারিয়ে যাওয়া কৃষি জমির কিছুটা ক্ষতিপূরণ করে আমাদের জনগণ অর্থনৈতিক অবদান রাখতে পারবে। তাই ছাদ বাগানের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বর্তমানে অনেক বেশি।

মোহাম্মদ ইকবাল কবির, সিনিয়র প্রভাষক (অর্থনীতি), চাঁদগাজী হাইস্কুল এন্ড কলেজ, ছাগলনাইয়া, ফেনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *